ব্রেকিং:
দেশে করোনায় ৮২ পুলিশ সদস্যের মৃত্যু, আক্রান্ত ১৮ হাজার আয়কর দিতে হবে ৩০ তারিখের মধ্যে গ্রামীণ বিদ্যুৎ সুবিধা উন্নয়নে ২০০ মিলিয়ন ডলার ঋণ দেবে এডিবি দেশের নানা আয়োজনে ১৭-২৬ মার্চ যোগ দেবেন বিশ্ব নেতারা স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের ছবি ব্যবহার করে ফেসবুকে প্রতারণা উৎপাদন বৃদ্ধিতে একযোগে কাজ করার অঙ্গীকার করোনাকালে চূড়ান্ত এমপিওভুক্তির সুখবর পেল ১৬৩৩ স্কুল-কলেজ করোনা মোকাবেলায় বঙ্গবন্ধুর স্বাস্থ্যসেবা দর্শন বৈশ্বিক ক্রয়াদেশ পূরণে সক্ষম বাংলাদেশ ॥ শেখ হাসিনা মানুষের পাশে দাঁড়াচ্ছে মানুষ, দৃষ্টান্ত স্থাপন করে চলেছে করোনা পরীক্ষা হবে চার বেসরকারি হাসপাতালে ২০ হাজারের বেশি আইসোলেশন শয্যা প্রস্তুত রয়েছে: স্বাস্থ্যমন্ত্রী করোনা আক্রান্তের শরীরের অক্সিজেনের পরিমাণ ঘরেই পরীক্ষার উপায় দেশে ২৪ ঘণ্টায় রেকর্ড সংখ্যক আক্রান্ত, আরো ৮ মৃত্যু করোনা মোকাবিলায় বাংলাদেশের প্রশংসা করলেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী দেশে ৫৪৯ নতুন করোনা রোগী শনাক্ত, আরো ৩ মৃত্যু হাসপাতাল থেকে পালানো করোনা রোগীকে বাগান থেকে উদ্ধার চাঁদপুরে ২০০০ পরিবারের মাঝে ইফতার সামগ্রী বিতরণ চীনের ৪ বিশেষজ্ঞ ঢাকায় আসছেন ভেন্টিলেটর-সিসিইউ স্থাপনে ১৪শ` কোটি টাকার জরুরি প্রকল্প
  • শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ৬ ১৪৩১

  • || ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫

সর্বশেষ:
একবছরে পাঁচগুণ মুনাফা বেড়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের আমাজন বাঁচাতে লিওনার্দোর ৫০ মিলিয়ন ডলারের অনুদান ১৬২৬৩ ডায়াল করলেই মেসেজে প্রেসক্রিপশন পাঠাচ্ছেন ডাক্তার জোরশোরে চলছে রূপপুর পারমাণবিক প্রকল্পের কাজ

সড়কে প্রাণহানি ঘটছেই, দুই মাসে ৩৪৫ জন নিহত

দৈনিক চাঁদপুর

প্রকাশিত: ২৯ জানুয়ারি ২০১৯  

রাজধানীতে চলছে ট্রাফিক শৃঙ্খলা পক্ষ। গত ১৫ জানুয়ারি থেকে শুরু হয়ে চলবে ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত। সড়কে শৃঙ্খলা আনতে পুলিশের ট্রাফিক বিভাগ তাদের দায়িত্ব পালন করছে, সেই সঙ্গে ট্রাফিক সচেতনতা কর্মসূচিও চালাচ্ছে। সড়কে অনিয়ম ও বিশৃঙ্খলার দায়ে মামলা দেওয়া ও যানবাহন ডাম্পিং করছেন। তবুও চালক-পথচারীদের মধ্যে তৈরি হচ্ছে না শৃঙ্খলা বোধ। ট্রাফিক শৃঙ্খলা পক্ষ চলাকালীন সময়ে সড়কে ঘটছে দুর্ঘটনা ও প্রাণহানি।


বিশিষ্টজনেরা বলছেন, সড়কে ফিটনেসবিহীন যানবাহনের চলাচল বন্ধ হয়নি, দিনে-রাতে সুযোগ পেলেই চালকরা বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালানো এবং ওভারটেকিং করছে। মূলত এসব কারণেই সড়কে এখনও দুর্ঘটনা ও প্রাণহানির ঘটনা ঘটছে। সড়কে দুর্ঘটনা নিয়ন্ত্রণে আনতে হলে আইনের শাসন কঠোরভাবে প্রয়োগ করতে হবে। সেই সঙ্গে প্রয়োজন সচেতনতামূলক প্রচারণা। নয়তো, সড়ক দুর্ঘটনা নিয়ন্ত্রণে আনা কোনোভাবেই সম্ভব নয়।


২০১৮ সালের ১ ডিসেম্বর থেকে চলতি বছরের ২৭ জানুয়ারি পর্যন্ত সারাদেশে সড়ক দুর্ঘটনায় মোট ৩৪৫ জন নিহত হয়েছে। এর মধ্যে ট্রাকের চাপায় ১২৮ জন, বাসের চাপায় ১২২ জন, অটোরিকশার ধাক্কায় ১৮ জন, মোটর সাইকেল দুর্ঘটনায় ৪৪ জন, প্রাইভেটকার দুর্ঘটনায় ২৪ জন এবং দুর্ঘটনার কারণ জানা যায়নি এমন ঘটনায় ৯ জন নিহত হয়েছেন।


বেপরোয়া ট্রাকের চাপায় রবিবার (২৮ জানুয়ারি) গভীর রাতেও প্রাণ হারিয়েছেন ডালিম (২০) নামে এক তরুণ। রাত পৌনে ১টার দিকে সৌদিআরব প্রবাসী বড় ভাই রুবেলকে বিমানবন্দরে পৌঁছে দিতে নরসিংদী থেকে ঢাকায় এসেছিলেন ডালিম । সঙ্গে তার বোন জামাই মোবারকও (৩০) ছিলেন। হাজি ক্যাম্পের পাশ দিয়ে হেঁটে বিমানবন্দরে প্রবেশের সময় দ্রুতগতির একটি ট্রাক তাদের দুজনকেই চাপা দেয়। ঘটনাস্থলেই মারা যান দুজন।


ঘটনার পরপরই পুলিশ ট্রাকটিকে জব্দ করে এবং ট্রাকের চালক শাহীন (৩৫) ও হেলপার লেবু (২২) কে বিমানবন্দর থানা হেফাজতে নেওয়া হয়। লোহার রড বোঝাই ওই ট্রাকটি ঢাকা থেকে বগুড়া যাচ্ছিল।


বিমানবন্দর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নুরে আযম আলম  জানান, প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে, রডবোঝাই ওই ট্রাকটি ব্রেকফেল হলে যাওয়ার কারণে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে সড়কের পাশে ফুটপাথ ও পুলিশ বক্সের ওপর তুলে দেয়। তবে ট্রাকটি পরীক্ষার জন্য বিআরটিএ-তে পাঠানো হবে।


এই ঘটনায় নিহত ডালিমের পরিবারের পক্ষ থেকে থানায় একটি মামলা দায়ের হয়েছে। ওই ট্রাকের চালক ও হেলপার দুইজনই গ্রেফতার রয়েছে। তাদের যথাযথ আইনের আওতায় আনা হবে বলেও জানান তিনি।


অপরদিকে, রবিবার (২৮ জানুয়ারি) দিনগত রাত আড়াইটার দিকে রাজধানীর খিলক্ষেতের তিনশ’ ফুট সড়ক দুর্ঘটনায় বুলবুল হোসেন (২২) নামে এক তরুণ নিহত হয়েছেন। ঘটনাস্থলে দুমড়ে-মুচড়ে যাওয়া একটি সিএনজিচালিত অটোরিকশা থেকে গুরুতর আহত অবস্থায় সাগর (২০) ও কামরুল (২২) নামে আরও দুইজনকে উদ্ধার করেছে পুলিশ।


তবে কীভাবে এই দুর্ঘটনা ঘটেছে তা এখনও জানাতে পারেনি পুলিশ। দুর্ঘটনার কারণ খুঁজে বের করার চেষ্টা চলছে বলেও জানায় পুলিশ।


খিলক্ষেত থানার সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) মো. শাহজাহান কবির বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, খবর পেয়ে ওই রাতে তিন’শ ফুট সড়কে গিয়ে একটি সিএনজি অটোরিকশাকে দুমড়ে-মুচড়ে পরে থাকতে দেখি। ওই অটোরিকশার নিচ থেকে তিনজনকে আহত অবস্থায় উদ্ধার করি। তাদের ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নিলে বুলবুল নামে একজনকে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। বাকি দুইজন চিকিৎসাধীন রয়েছে।


এছাড়াও সোমবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে রাজধানীর শ্যামপুরের জুরাইন রেলগেইট এলাকায় আব্বাস আলী (৫৪) নামে একজন ট্রাকচালক নিহত হয়েছে। ওই সড়কে যানজটে পড়লে চালক ট্রাকের দরজা খুলে নিচে নামতেই পাশ দিয়ে আসা একটি অটোরিকশা ধাক্কা দিলে গুরুতর আহত হন তিনি। পরে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নিয়ে গেলে দুপুর ২টার দিকে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।


বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমাদের দেশে সড়কের সার্বিক অব্যবস্থাপনা থেকে বেরিয়ে আসতে না পারলে দুর্ঘটনা ও প্রাণহানি নিয়ন্ত্রণে আনা কোনোভাবেই সম্ভব নয়। সেই সঙ্গে চালক-পথচারীদের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে। সড়কে আইন না মানার প্রবণতা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে এবং প্রশাসনকেও আইনের কঠোর প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে।’


তিনি বলেন,‘ কিছুদিন আগে দেশজুড়ে নিরাপদ সড়কের জন্য আন্দোলন হলো। ছোট ছোট শিক্ষার্থীরা সবার চোখে আঙুল দিয়ে ভুলগুলো দেখিয়ে দিল। ওই আন্দোলনকে দেশের সবাই সমর্থন করেছে। কিন্তু তারপরও কেউ নিয়ম-কানুন ও আাইন মানছে না। আবারও একই ভুল করছে। তাহলে কী লাভ হলো?’


সম্প্রতি ঘটে যাওয়া সড়ক দুর্ঘটনার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘একদিকে ট্রাফিক শৃঙ্খলা পক্ষ চলছে, অপরদিকে সড়কে নৈরাজ্যও চলছে। তবুও দুর্ঘটনা ও প্রাণহানিও ঘটছে। এতে বোঝা যাচ্ছে, সড়কে আইনের শাসন এখনও প্রতিষ্ঠা হয়নি।’
দুর্ঘটনায় স্বপ্ন ভাঙে অসংখ্য পরিবারের‘ট্রাফিক শৃঙ্খলা পক্ষ মানে আমি বুঝি, সড়কে আনফিট (ফিটনেসবিহীন) গাড়ি চলবে না, স্টপেজ ছাড়া কোনও বাস যাত্রী উঠানো-নামানো করবে না, সড়কে বেপরোয়া গতিতে গাড়ির চলাচল হবে না, সড়কে যাত্রী ও পথচারী হয়রানির শিকার হবে না। কিন্তু এগুলো তো ট্রাফিক শৃঙ্খলা পক্ষে দেখা যাচ্ছে না।’


শুধু মামলা দিয়ে বা জরিমানা করে সমাধান মিলবে না উল্লেখ করে তিনি বলেন, চালকদের মানসিকতা পরিবর্তনের জন্য কাজ করতে হবে। মালিকদের লোভের মানসিকতা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে এবং যাত্রী ও পথচারীদের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধিতে সরকারের প্রচেষ্টা থাকতে হবে। সড়কে চালক ও পথচারীরা ট্রাফিক আইন মেনে চললে দুর্ঘটনা কমবে।


নিরাপদ সড়ক চাই (নিসচা)-এর চেয়ারম্যান ইলিয়াস কাঞ্চন বলেন, ‘ট্রাফিক আইন অমান্যে জরিমানার হার বাড়াতে হবে। উপযুক্ত (গায়ে লাগার মতো) অর্থদণ্ড হলে মানুষ আইন মানবে। দুর্ঘটনায় যারা স্বজন হারিয়েছে শুধু তারাই বুঝবে এতে কত বেদনা, সেটা অন্য কেউ বুঝবে না।’


তিনি বলেন, ‘আমার সাজেশন হচ্ছে,তিনমাস দেশের সব স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় ও সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে গিয়ে ট্রাফিক সচেতনতামূলক প্রচারণা চালাতে হবে। এরপর কেউ ট্রাফিক শৃঙ্খলা ভঙ্গ করলে অপরাধীসহ তার কর্মরত প্রতিষ্ঠানের মালিককেও এর মাসুল দিতে হবে।’

দৈনিক চাঁদপুর
দৈনিক চাঁদপুর