কেমন আছেন ২১ আগস্টে আহতরা?
দৈনিক চাঁদপুর
প্রকাশিত: ২১ আগস্ট ২০১৯
আজ ২১ আগস্ট ২০১৯। তবে ২০০৪ সালের এ দিনটি কারো কারো ছিল দুঃস্বপ্নের। এদিন আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসবিরোধী সমাবেশে গ্রেনেড হামলার পর রক্তাক্ত-বিধ্বস্ত হয় বঙ্গবন্ধু এভিনিউ।
নৃশংস ও বর্বরোচিত এ হামলার শিকার হয়ে ২৪ জন নিহত এবং তৎকালীন বিরোধী দলীয় নেত্রী ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ আহত হন প্রায় ৩০০ জন।
এই হামলায় নিহতদের মধ্যে আওয়ামী লীগের শীর্ষস্থানীয় নারী নেত্রী মিসেস আইভি রহমান অন্যতম। তিনি বাংলাদেশের ১৯তম রাষ্ট্রপতি প্রয়াত জিল্লুর রহমানের স্ত্রী ছিলেন।
এক হাজার ৮শ’ স্প্লিন্টার নিয়ে আজো বেঁচে আছেন সাভারের মাহবুবা পারভীন। মৃত্যুর আগে একটাই চাওয়া, হামলাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি।
সে সময়ে ঢাকা জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের মহিলাবিষয়ক সহসম্পাদক মাহবুবা পারভীন প্রয়াত আইভি রহমানের পাশেই ছিলেন। সে দিন গ্রেনেডের হামলায় পারভীন বেঁচে আছে, না মৃত কেউ বুঝতেই পারেনি।
আইভি রহমানের পাশে যে তিন জন মহিলা রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে ছিলেন তাদের একজন সাভারের মাহবুবা পারভীন।
মাহবুবা গুরুতর আহত হয়ে অজ্ঞান অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের লাশ ঘরে পড়ে থাকেন। দীর্ঘ ৬ ঘণ্টা পর স্বেচ্ছাসেবক লীগের কেন্দ্রীয় নেতা আশিষ কুমার মজুমদার সেখানে লাশ সনাক্ত করতে গিয়ে মাহবুবা পারভীনকে জীবিত দেখতে পান।
৭২ ঘণ্টা পর তার জ্ঞান ফিরে আসে। দেশে চিকিৎসায় ভালো না হওয়ায় উন্নত চিকিৎসার জন্য দলীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনা তাকে ভারতের কলকাতার পিয়ারলেস হাসপাতালে পাঠান।
মাহবুবা পারভীনের দেহে এখনো রয়েছে ১ হাজার ৮শ’ স্প্লিন্টার। মাথার দুটি স্প্লিন্টার তাকে এখনো যন্ত্রণা দিয়ে যাচ্ছে। মাঝেমধ্যেই তিনি পাগলের মতো হয়ে যান। তার শারীরিক অবস্থা এখন ভালো না। দীর্ঘ ১৬ বছর ধরে গ্রেনেডের স্প্লিন্টার দেহের মধ্যে নিয়ে আর্থিক ও মানসিক কষ্টে দিন কাটাচ্ছেন পারভীন।
২১ আগস্ট এলেই ভয়াবহ স্মৃতি মনে পড়লে এখনো আঁতকে ওঠেন তিনি, কান্নায় চোখ-মুখ ভিজে যায় তার। ওই দৃশ্য মনে করলে ভয়ে তার দেহ অবশ হয়ে যায়। তাই এ ব্যাপারে তিনি আর স্মৃতিচারণ করতে চান না।
জানতে চাইলে মাহবুবা পারভীন আক্ষেপ করে বলেন, আমার মাথার মধ্যের ২টি স্প্লিন্টার এখনো বের করা হয়নি।
আমার ব্যাংক কলোনির নিজ বাড়িটি বসবাস করার অনুপযোগী হয়ে গেছে। তাই স্বামী ফ্লাইট সার্জেন্ট (অব.) এম এ মাসুদকে নিয়ে বর্তমানে সাভার পৌর এলাকায় শিমুলতলায় ভাড়াবাড়িতে বসবাস করছেন মাহবুবা পারভীন। তার দুই ছেলের মধ্যে বড় ছেলে আসিফ পারভেজ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এমবিএর ছাত্র। ছোট ছেলে রোওশাদ যোবায়ের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে অনার্সের ছাত্র।
তিনি বলেন, রাজনীতির কারণে আমার জীবন এখন নিত্য কুড়ে কুড়ে খাচ্ছে মরণঘাতক গ্রেনেডের স্প্লিন্টার। স্প্লিন্টার সারাক্ষণ যন্ত্রণা দিচ্ছে। আমার শেষ ইচ্ছা ছেলেদের উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত করতে পারলে এবং তারা ভালো থাকলেই আমার মুখে হাসি ফুটবে। আমি তাদের সুখ দেখে যেতে চাই। একই সঙ্গে তিনি মৃত্যুর আগে গ্রেনেড হামলাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি কামনা করেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রতিমাসে ওষুধপত্র খাওয়ার জন্য ১০ হাজার টাকা দেন। আর ১০ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র দিয়েছেন। এ থেকে যে টাকাটা আসে তাই দিয়ে চলে তার চিকিৎসা ও সংসার খরচ।
তিন বছর তিনি হুইল চেয়ারে বসে কাটিয়ে এখন সামান্য হাঁটাহাঁটি করতে পারেন। তবে গোসল রান্না-বান্নায় এখনো অন্যের সাহায্য নিতে হয়। মাঝেমধ্যে দলের কোনো কর্মসূচি থাকলে মানুষের সাহায্য নিয়ে তিনি ছুটে যান সেখানে। পরিবারের আপত্তি থাকা সত্ত্বেও তিনি রাজনীতিতে সংযুক্ত হয়েছিলেন।
২০০৫ সালে কলকাতার পিয়ারলেস হাসপাতালে চিকিৎসা শেষে সেখানকার ডাক্তাররা তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুর যাওয়ার পরামর্শ দেন। কিন্তু পারভীনের আর সেখানে যাওয়ার ভাগ্য হয়নি। এখনো তিনি আশায় আছেন, সরকারের সহযোগিতা পেলে উন্নত চিকিসার জন্য সিঙ্গাপুর যাবেন।
তিনি আরো বলেন, বঙ্গবন্ধুর কন্যাকে যারা হত্যা করার ষড়যন্ত্র করেছে, আইভি রহমানসহ ২৩ জন নেতাকর্মীকে নৃশংসভাবে হত্যা করছে তাদের শাস্তি দেখে যেতে না পারলে মরেও শান্তি পাব না।
সেদিন মৃত্যুর দুয়ার থেকে ফিরে আসেছিলেন তৎকালিন মহানগর মহিলা লীগ নেত্রী নাসিমা ফেরদৌসী।
উড়ে যাওয়া দুই পায়ের আঙুলগুলো জড়ো করার চেষ্টা করেছিলেন। এরপর আর জানেন না। জ্ঞান ফিরলে জানতে পারেন, মৃত ভেবে আরো ১২-১৩টা লাশের সঙ্গে তাকেও ট্রাকে করে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল ঢাকা মেডিকেলের মর্গে। কখন হঠাৎ মাকে ডেকেছেন মনে নেই।
ক্ষীণস্বরের ওই আওয়াজ শুনতে পেয়েছিলেন লাশবহনকারী সহকর্মীরা। তারাই লাশের ভেতর জীবিত তাকে সনাক্ত করে জরুরি বিভাগে নিয়ে যান। সেখানে চিকিৎসা সম্ভব নয় বলে ডাক্তার অস্বীকৃতি জানালে লালমাটিয়ার একটি বেসরকারি হাসপাতালে তাকে রাখা হয়। রাতেই পাঠানো হয় ভারতে।
রক্তাক্ত একুশে আগস্টের সেই ভয়াল দুঃস্বপ্নের কথা স্বরণ করে তিনি বলেন, দুই পা হারিয়ে আর দেড় হাজারেরও বেশি স্প্লিন্টার শরীরে নিয়ে দুঃসহ যন্ত্রণা নিয়ে এখনো বেঁচে আছেন তিনি। প্রতিটি মুহূর্তে তাকে তাড়িয়ে বেড়ায় একুশে আগস্টের সেই ভয়াবহতা।
মহানগর ছাত্রলীগের সহ সভাপতি শাহ আলম মিন্টু। আজও শরীরে স্প্লিন্টার বয়ে বেড়াচ্ছেন তিনি।
জানতে চাইলে তিনি বলেন, ওই দিন মহানগর ছাত্রলীগের উদ্যোগে জিরো পয়েন্ট থেকে মিছিলসহকারে বঙ্গবন্ধু ২৩ এভিনিউতে আসি। আমরা মিছিল নিয়ে নেত্রীর কাছে যেতেই একটি বোমা আমাদের সামনে এসে পরে। আমরা প্রথমে ভেবেছিলাম হয়তো নেত্রী যে ট্রাকে উঠেছে, সেই ট্রাকের ট্রায়ার ব্লাস্ট হয়ে গেছে। কিন্তু আমরা কোনো কিছু বুঝে ওঠার আগেই মুর মুর করে একের পর এক বোমা ফুটতে লাগল। মুহূর্তের মধ্যে পুরো জায়গাটা একটা রণক্ষেত্রে পরিণত হলো। কারো হাত নেই, কারো পা নেই, সবাই যার যার মতো করে চিৎকার করছে। কেউ কাউকে সাহায্য করার মতো নেই। সবাই নিজের মতো করে চিৎকার-চেচামেচি করছে।
তিনি বলেন, কখন যে আমি মাটিতে পরে গেছি বলতে পারি না। জ্ঞান ফেরার পর দেখি আমার শরীরের উপর দিয়ে হাজার হাজার মানুষ দৌড়ে পালাচ্ছে। আল্লাহর অশেষ মেহেরবানীতে কোনোরকমভাবে উঠে দাড়ালাম। পড়ে দেখি সারা শরীরে রক্ত। বাম পা নারাতে পারছি না। তার কিছুক্ষণ পরে এক পরিচিত ছোট ভাইয়ের সঙ্গে দেখা হলো। সেই প্রথমে আমাকে ঢাকা মেডিকেলে নিয়ে যায়।
চিকিৎসা শেষে বঙ্গবন্ধু কন্যা আমরা যারা হামলায় আহত হয়েছিলাম, সবাইকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন এবং আমাকে ২০ হাজার টাকা চিকিৎসা খরচ দেন।
শুধু, মাহবুবা, নাসিমা, মিন্টুই নয়, ২১ আগস্টে সেই ভয়াবহ ঘটনায় শিকার অনেকেই এখনো পঙ্গু। কেউ কেউ বীভৎস সেই ঘটনার যন্ত্রণাময় ক্ষত এখনো বয়ে বেড়াচ্ছেন শরীরে। কেউ চলৎশক্তিহীন। কেউ হারিয়েছেন দৃষ্টিশক্তি। অনেকের শরীরে রয়ে গেছে অসংখ্য স্প্লিন্টারের অস্তিত্ব। সবমিলিয়ে অসহ্য যন্ত্রণা এখনো তাদের নিত্যসঙ্গী। বিদেশে গিয়ে সুচিকিৎসার সামর্থ্য নেই বেশিরভাগেরই। সেদিনের ভয়াবহতার কথা মনে এলে আঁতকে ওঠেন এখনো তারা। সেদিনের দুঃস্বপ্ন প্রতিনিয়ত তাড়া করে ফেরে তাদের। অন্যদিকে প্রিয়জন হারানোর বেদনা বুকে চেপে বেঁচে আছেন গ্রেনেড হামলায় নিহতদের স্বজনরা। অনেক পরিবারে চলছে চরম দুর্দশা। মানবেতর জীবনযাপন এখন তাদের নিত্যদিনের সঙ্গী।
গ্রেনেড হামলার পর থেকে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা আর্থিক সহযোগিতাসহ নিয়মিত খোঁজখবর নিয়েছেন অসহায় পরিবারগুলোর। আহতদের চিকিৎসা চালিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে সহযোগিতা দিয়েছেন। বঙ্গবন্ধু স্মৃতি ট্রাস্টসহ ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা ফান্ডের মাধ্যমে নিহত ও আহতদের সন্তানদের লেখাপড়ার খরচ জোগানো হচ্ছে।
২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলা
বাংলাদেশে ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট ঢাকায় আওয়ামী লীগের এক জনসভায় গ্রেনেড হামলা হয়, যে হামলায় ২৪ জন নিহত হন এবং তৎকালীন বিরোধী দলীয় নেত্রী শেখ হাসিনা সহ প্রায় ৩০০ লোক আহত হন।
২০০৪ সালে সারাদেশে জঙ্গিদের বোমা হামলা এবং গোপালগঞ্জে পুলিশি নির্যাতনের প্রতিবাদে ২১ আগস্ট বিকেলে ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ ঢাকার বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে দলীয় কার্যালয়ের সামনে এক সমাবেশের আয়োজন করে। সমাবেশের প্রধান অতিথি শেখ হাসিনা অনুষ্ঠানস্থলে বিকেল পাঁচটায় পৌঁছালে, একটি ট্রাকের ওপর তৈরি মঞ্চে তিনি কুড়ি মিনিটের বক্তৃতা শেষে বিক্ষোভ মিছিল শুরু করার ঘোষণা দেন। বঙ্গবন্ধু কন্যা মঞ্চ থেকে নিচে নেমে আসতে থাকেন। ঠিক এমন সময় শুরু হয় মঞ্চ লক্ষ্য করে গ্রেনেড হামলা। মাত্র দেড় মিনিটের মধ্যে বিস্ফোরিত হয় ১১টি শক্তিশালী গ্রেনেড। এতে ঘটনাস্থলেই ১২ জন এবং পরে হাসপাতালে আরো ১২ জন নিহত হন।
- মানুষের কল্যাণে কাজ করে যাচ্ছেন শেখ হাসিনা
- মদ খেয়ে নারী নিয়ে হোটেলে নোবেল, গভীর রাতে চেঁচামেচি
- ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় নৌকাডুবির ঘটনায় মামলা, গ্রেফতার ৫
- দেশের অগ্রযাত্রা ও উন্নয়নকে বাঁচিয়ে রাখতে শেখ হাসিনার পাশে থাকতে
- ৬ দশমিক ৩ মাত্রার শক্তিশালী ভূমিকম্পে কেঁপে উঠল ক্রোয়েশিয়া
- দেশে করোনায় ৮২ পুলিশ সদস্যের মৃত্যু, আক্রান্ত ১৮ হাজার
- মোংলা বন্দরের নতুন চ্যানেল নির্মাণ সম্পন্ন
- আয়কর দিতে হবে ৩০ তারিখের মধ্যে
- গ্রামীণ বিদ্যুৎ সুবিধা উন্নয়নে ২০০ মিলিয়ন ডলার ঋণ দেবে এডিবি
- দেশের নানা আয়োজনে ১৭-২৬ মার্চ যোগ দেবেন বিশ্ব নেতারা
- স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের ছবি ব্যবহার করে ফেসবুকে প্রতারণা
- কর্মস্থল ত্যাগকারীদের তালিকা চায় মন্ত্রণালয়
- ‘মধ্যবিত্তদেরও খাদ্য সহায়তার আওতায় আনা হয়েছে’
- আজ থেকে চালু হচ্ছে মালবাহী ট্রেন
- চালু হলো দেশের প্রথম বেসরকারি আরটি পিসিআর ল্যাব
- করোনার আতঙ্কেও এগিয়ে চলছে পদ্মা সেতুর কাজ
- উৎপাদন বৃদ্ধিতে একযোগে কাজ করার অঙ্গীকার
- করোনাকালে চূড়ান্ত এমপিওভুক্তির সুখবর পেল ১৬৩৩ স্কুল-কলেজ
- হাওরে প্রায় ৩ লাখ ২৫ হাজার শ্রমিক ধান কাটছেন: কৃষিমন্ত্রী
- ময়মনসিংহে করোনা রোগীদের জন্য স্বেচ্ছাসেবক লীগের ৫টি অ্যাম্বুলেন্স
- করোনা মোকাবেলায় বঙ্গবন্ধুর স্বাস্থ্যসেবা দর্শন
- বৈশ্বিক ক্রয়াদেশ পূরণে সক্ষম বাংলাদেশ ॥ শেখ হাসিনা
- মানুষের পাশে দাঁড়াচ্ছে মানুষ, দৃষ্টান্ত স্থাপন করে চলেছে
- করোনা পরীক্ষা হবে চার বেসরকারি হাসপাতালে
- ২০ হাজারের বেশি আইসোলেশন শয্যা প্রস্তুত রয়েছে: স্বাস্থ্যমন্ত্রী
- সুখবর আসছে ব্যাংক সুদে
- গুগল ম্যাপের বিকল্প আনলো হুয়াওয়ে
- অভিনেতা ইরফান খান মারা গেছেন
- ঘরে থাকা সাত জিনিস ফুসফুসের জন্য ক্ষতিকর
- ফ্রিজে ২৮ দিন বাঁচে সার্স-কভ ভাইরাস! জীবাণুমুক্ত করার উপায়