ব্রেকিং:
দেশে করোনায় ৮২ পুলিশ সদস্যের মৃত্যু, আক্রান্ত ১৮ হাজার আয়কর দিতে হবে ৩০ তারিখের মধ্যে গ্রামীণ বিদ্যুৎ সুবিধা উন্নয়নে ২০০ মিলিয়ন ডলার ঋণ দেবে এডিবি দেশের নানা আয়োজনে ১৭-২৬ মার্চ যোগ দেবেন বিশ্ব নেতারা স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের ছবি ব্যবহার করে ফেসবুকে প্রতারণা উৎপাদন বৃদ্ধিতে একযোগে কাজ করার অঙ্গীকার করোনাকালে চূড়ান্ত এমপিওভুক্তির সুখবর পেল ১৬৩৩ স্কুল-কলেজ করোনা মোকাবেলায় বঙ্গবন্ধুর স্বাস্থ্যসেবা দর্শন বৈশ্বিক ক্রয়াদেশ পূরণে সক্ষম বাংলাদেশ ॥ শেখ হাসিনা মানুষের পাশে দাঁড়াচ্ছে মানুষ, দৃষ্টান্ত স্থাপন করে চলেছে করোনা পরীক্ষা হবে চার বেসরকারি হাসপাতালে ২০ হাজারের বেশি আইসোলেশন শয্যা প্রস্তুত রয়েছে: স্বাস্থ্যমন্ত্রী করোনা আক্রান্তের শরীরের অক্সিজেনের পরিমাণ ঘরেই পরীক্ষার উপায় দেশে ২৪ ঘণ্টায় রেকর্ড সংখ্যক আক্রান্ত, আরো ৮ মৃত্যু করোনা মোকাবিলায় বাংলাদেশের প্রশংসা করলেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী দেশে ৫৪৯ নতুন করোনা রোগী শনাক্ত, আরো ৩ মৃত্যু হাসপাতাল থেকে পালানো করোনা রোগীকে বাগান থেকে উদ্ধার চাঁদপুরে ২০০০ পরিবারের মাঝে ইফতার সামগ্রী বিতরণ চীনের ৪ বিশেষজ্ঞ ঢাকায় আসছেন ভেন্টিলেটর-সিসিইউ স্থাপনে ১৪শ` কোটি টাকার জরুরি প্রকল্প
  • বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১২ ১৪৩১

  • || ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

সর্বশেষ:
একবছরে পাঁচগুণ মুনাফা বেড়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের আমাজন বাঁচাতে লিওনার্দোর ৫০ মিলিয়ন ডলারের অনুদান ১৬২৬৩ ডায়াল করলেই মেসেজে প্রেসক্রিপশন পাঠাচ্ছেন ডাক্তার জোরশোরে চলছে রূপপুর পারমাণবিক প্রকল্পের কাজ

স্বাধীনতা দিবসে দেখুন মুক্তিযুদ্ধের চলচ্চিত্র

দৈনিক চাঁদপুর

প্রকাশিত: ২৬ মার্চ ২০২০  

বাংলাদেশের জন্মলগ্ন থেকে বিভিন্ন সময়ে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক নানা চলচ্চিত্র নির্মাণ হয়েছে। সুস্থ ধারার চলচ্চিত্রগুলোর মধ্যে বড় অংশ জুড়ে আছে এই মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক চলচ্চিত্রগুলো। এ চলচ্চিত্রগুলোতে যেমন সরাসরি যুদ্ধের ভয়াবহতা উঠে এসেছে। সেই সঙ্গে কিছু চলচ্চিত্রে প্রত্যক্ষভাবে যুদ্ধকে উপস্থাপন না করে পরোক্ষভাবে এর ভয়াবহতাকে উপস্থাপন করা হয়েছে। উপস্থাপন করা হয়েছে যুদ্ধের স্বীকার হওয়া শরণার্থী বা পালিয়ে বেড়ানো মানুষের জীবনাবেগকে। এ ছাড়াও কিছু চলচ্চিত্র নির্মিত হয়েছে যুদ্ধ পূর্বকালীন ও যুদ্ধ পরবর্তী বাংলাদেশের প্রভাব ও রাজনৈতিক ও সামাজিক পরিস্থিতি ও বাস্তবতা নিয়ে। এর বাইরেও বেশ কিছু চলচ্চিত্রে উঠে এসেছে মুক্তিযুদ্ধের নানা দিক। স্বাধীনতা দিবসে মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে নির্মিত কিছু চলচ্চিত্রের কথা আলোচনা করা হলো। দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে ঘরে বসে এই চলচ্চিত্রগুলো দেখতে পারেন।  


জীবন থেকে নেয়া: এই ছবিটি নির্মাণ করেছেন জহির রায়হান। এটি ১৯৭০ সালের এপ্রিল মুক্তি পায়। সামাজিক এই চলচ্চিত্রে তৎকালীন বাঙালি স্বাধীনতা আন্দোলনকে রূপকের মাধ্যমে তুলে ধরা হয়েছে। ছবিটিতে অভিনয় করেছিলেন রাজ্জাক, সুচন্দা, রোজী সামাদ, খান আতাউর রহমান, রওশন জামিল, আনোয়ার হোসেন, প্রমুখ। এই ছবিতে আমার সোনার বাংলা গানটি চিত্রায়িত হয়েছিল, যা পরবর্তীকালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীত হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করে।

ওরা ১১ জন: বাংলাদেশ যুদ্ধ জয়ের কিছুদিন পরেই ১৯৭২ সালে এই সিনেমার মুক্তি হয়। যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশে শহীদের রক্তের দাগ তখনো শুকায়নি। স্বাধীনতার উপলব্ধি তখনো অনেকের মনে উঁকি দিচ্ছে দিন-রাত। ঠিক সেই সময় পরিচালক চাষী নজরুল ইসলাম আর প্রযোজক মুরাদ পারভেজ দায় অনুভব করলেন এই সময়ের সাক্ষী হওয়ার। চিন্তা হলো, এমন একটি সিনেমা বানানো হবে, যা মুক্তিযুদ্ধের প্রেক্ষাপটে আমাদের স্বাধীনতার মর্মকথা শোনাবে। সঙ্গে নেয়া হল খসরু, মুরাদ ও নান্টুর মতো প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের। এই সিনেমায় অনেক গোলাগুলি এবং গেরিলা যুদ্ধের দৃশ্য রয়েছে, যা সত্যিকারের রাইফেল, এলএমজি ও গ্রেনেড দিয়ে করা। সদ্য মুক্তি পাওয়া দেশে কলাকুশলীদের নিরন্তর ভালোবাসা ও কঠোর পরিশ্রমের ফসল মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম ছবি ‘ওরা ১১ জন’।

অরুণোদয়ের অগ্নিসাক্ষী: সুভাষ দত্তের পরিচালনায় ১৯৭২ সালে নির্মিত আরেকটি চলচ্চিত্রের নাম ‘অরুণোদয়ের অগ্নিসাক্ষী’। যুদ্ধের সময় পাকিস্তানি বাহিনীর কলুষিত হাত পড়ে আমাদের দেশের লাখো নারীদের প্রতি। সেই সব নারী, যারা বীরাঙ্গনা, তাদের জন্য স্লোগান ওঠে, লাঞ্চিত নারীত্বের মর্যাদা দাও/নিষ্পাপ সন্তানদের বরণ কর…। মূলত বীরাঙ্গনা নারীদের আকুতির প্রেক্ষাপট নিয়েই আবর্তিত হয় ছবিটির মূল কাহিনী। ছবিটির তিনটি প্রধান চরিত্রে অভিনয় করেছেন ববিতা, উজ্জ্বল ও আনোয়ার হোসেন। অন্যরকম কাহিনীচিত্র এবং অসম্ভব দক্ষ অভিনয়ের জন্য বেশ প্রশংসিত হয়েছিল সিনেমাটি।

রক্তাক্ত বাংলা: এটি মম চলচ্চিত্রের প্রথম প্রযোজনায় এবং মমতাজ আলীর পরিকল্পনা ও পরিচালনায় বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন সংস্থায় গৃহীত, মুদ্রিত ও পরিস্ফূটিত মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক একটি চলচ্চিত্র। চলচ্চিত্রটির মূল কাহিনী রত্না চ্যাটার্জীর; এবং চিত্রনাট্য ও সংলাপ রচনা করেন শান্তি কুমার চ্যাটার্জী। শ্রেষ্ঠাংশে ছিলেন বিশ্বজিৎ, কবরী, মুস্তফা, সুলতানা, জয়নাল ও খলীল। এটি মুক্তি পায় ১৯৭২ সালে। চলচ্চিত্রর চিত্রগ্রহণ করেন সাধন রায় ও এম.এ মোবিন এবং শব্দগ্রহণ করেন মোজাম্মেল হক আর সম্পূর্ণ চলচ্চিত্রর সম্পাদনা করেন বুলবুল চৌধুরী।

ধীরে বহে মেঘনা: বাংলাদেশের যুদ্ধ পরবর্তী সময়ের আরেকজন শক্তিমান পরিচালক আলমগীর কবিরের হাত ধরে আমরা পাই মুক্তিযুদ্ধের উপর নির্মিত আরেকটি উল্লেখযোগ্য ছবি ‘ধীরে বহে মেঘনা’। চলচ্চিত্রটির মূল পরিকল্পনা ছিল জহির রায়হানের। ২০০২ সালে ব্রিটিশ ফিল্ম ইন্সটিটিউট দক্ষিণ এশিয়ার সেরা ১০টি চলচ্চিত্রের মধ্যে ‘ধীরে বহে মেঘনা’ সিনেমাটিকে অন্তর্ভুক্ত করেছে। সিনেমায় মোহাম্মদ মনিরুজ্জামানের লেখায় এবং সমর দাসের সুরে ‘কতো যে ধীরে বহে মেঘনা’ গানটি হেমন্ত মুখোপাধ্যায় আর সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়ের কণ্ঠে এক অপূর্ব আবহের সৃষ্টি করে। ১৯৭৩ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত এই ছবিতে অভিনয় করেন বুলবুল আহমেদ, ববিতা, গোলাম মুস্তাফা, আনোয়ার হোসেন, খলিল উল্লাহ খানসহ আরো অনেকে।

আবার তোরা মানুষ হ: ১৯৭৩ সালে মুক্তিযুদ্ধের উপর বেশ কয়েকটি ছবি মুক্তি পায়, যার মধ্যে খান আতাউর রহমানের ‘আবার তোরা মানুষ হ’ বেশ জনপ্রিয়। আমজাদ হোসেনের রচিত কাহিনী নিয়ে নির্মিত এ চলচ্চিত্রটির চিত্রনাট্য, সংলাপ ও সঙ্গীত রচয়িতা খান আতা নিজেই। এই ছবিতে অভিনয় করেন ফারুক, আসাদ, খান আতাউর রহমান, ববিতা ও রওশন জামিল। যুদ্ধ পরবর্তী প্রেক্ষাপটে মুক্তিযোদ্ধাদের যে কষ্টের মধ্যে যেতে হয়েছে তার একটি অনন্য চিত্রায়ন এই ছবি। কিন্তু গল্পের বিষয়বস্তু এবং নামকরণ নিয়ে অনেক মহলে অনেক ধরনের সমালোচনার ঝড় ওঠে। এমনকি সেন্সর বোর্ড থেকেও ছবি মুক্তির প্রক্রিয়া বিলম্বিত হয়। অবশেষে খান আতাউর রহমানের প্রচেষ্টায় মুক্তি পায় এবং ব্যাপক প্রশংসিত হয় সিনেমাটি।

আলোর মিছিল: এটি ১৯৭৪ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত বাংলাদেশী মুক্তিযুদ্ধের চলচ্চিত্র। বাংলাদেশের বিখ্যাত চলচ্চিত্র পরিচালক নারায়ণ ঘোষ মিতা ছবিটি পরিচালনা করেছেন। ছবিটিতে বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেছেন ফারুক, ববিতা, রাজ্জাক, সুজাতা।

একাত্তরের যীশু: নাসিরউদ্দীন ইউসুফ বাচ্চু আমাদের সংস্কৃতি অঙ্গনে খুব পরিচিত নাম। শাহরিয়ার কবিরের ‘একাত্তরের যীশু’ উপন্যাসের উপর ভিত্তি করে ১৯৯৩ সালে তিনি নির্মাণ করেন ‘একাত্তরের যীশু’ চলচ্চিত্রটি। যুদ্ধের একপর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধাদের ক্রুশবিদ্ধ করে হত্যার পথ বেছে নেয় একদল পাকিস্তানি সেনাবাহিনী। তাই ক্রুশবিদ্ধ মুক্তিযোদ্ধাদের যীশুর সঙ্গে তুলনা করে ছবিটির নামকরণ করা হয় ‘একাত্তরের যীশু’। ছবির প্রধান চরিত্রে অভিনয় করেছেন পীযূষ বন্দ্যোপাধ্যায়, হুমায়ূন ফরীদি, জহির উদ্দিন পিয়াল, আবুল খায়ের ও শহীদুজ্জামান সেলিম।

আগুনের পরশমণি: নন্দিত কথা সাহিত্যিক ও নির্মাতা হুমায়ূন আহমেদ আমাদের উপহার দিয়েছিলেন অনন্য এক মুক্তিযুদ্ধের ছবি। অত্যন্ত সহজ সরল ভাষায়, প্রাণবন্ত অভিনয় আর কুশলী উপস্থাপনায় তিনি তৈরি করেছিলেন ‘আগুনের পরশমণি’, যা এখনো আমাদের মনকে নাড়া দিয়ে যায়। এই চলচ্চিত্রে আসাদুজ্জামান নূরের অভিনয়ে বলিষ্ঠ ব্যক্তিত্ব, আবুল হায়াতের অসহায়ত্ব, ডলি জহুরের মাতৃমনের পরিচয়, বিপাশা হায়াতের একজন মুক্তিযোদ্ধার প্রতি ভালোবাসা- এ সবই দর্শকদের এক কল্পনার জগতে নিয়ে যায়। শেষ দৃশ্যে আসাদুজ্জামান নূরের হাতে যখন রাতের সব অন্ধকার পেছনে ফেলে নতুন দিনের সূর্যের আলো এসে পড়ে, তখন যেন স্বাধীনতা এসে ধরা দেয় এক নতুন আলোকে সাক্ষী রেখে।

নদীর নাম মধুমতি: বাংলাদেশের চলচ্চিত্র জগতের এক পরিচিত নাম তানভীর মোকাম্মেল। ১৯৯৫ সালে মুক্তি পাওয়া ‘নদীর নাম মধুমতি’ চলচ্চিত্রটি মুক্তিযুদ্ধে বাঙালি রাজাকারদের দুরাচারের সাক্ষী। মধুমতি নদীর পাড় ধরে গড়ে ওঠা একটি গ্রামের মোতালেব মোল্লা নামে এক রাজাকারকে কেন্দ্র করে ছবিটির পুরো কাহিনীচিত্র আবর্তিত হয়। সেই ঘরেরই এক ছেলে বাচ্চু স্বাধীনতার জাগরণে উদ্বুদ্ধ হয়ে মোতালেব মোল্লাকে নিশ্চিহ্ন করার উদ্দেশ্যে পা বাড়ায়। মোতালেবের চরিত্রে অভিনয় করেন আলী যাকের আর বাচ্চুর চরিত্রটি করেন তৌকির আহমেদ। কাহিনী ও সংলাপ রচনার জন্য তানভীর মোকাম্মেল শ্রেষ্ঠ কাহিনীকার ও শ্রেষ্ঠ সংলাপ রচয়িতা বিভাগে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করেন।

এখনো অনেক রাত: এটি ১৯৯৭ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত বাংলাদেশী বাংলা ভাষার যুদ্ধভিত্তিক চলচ্চিত্র। ছায়াছবিটি পরিচালনা করেছেন খান আতাউর রহমান। এটি খান আতা পরিচালিত শেষ চলচ্চিত্র। এই ছায়াছবির কাহিনী, চিত্রনাট্য ও সংলাপ লিখেছেন খান আতাউর রহমান। খান আতাউর রহমানের প্রযোজনায় চলচ্চিত্রটি পরিবেশিত হয় খান আতা প্রাইভেট লিমিটেডের ব্যানারে মুক্তিযুদ্ধ এবং মুক্তিযুদ্ধের পরের সময়ের চিত্র তুলে ধরা হয়েছে এই ছায়াছবিতে। এতে প্রধান চরিত্রে অভিনয় করেছেন সুচরিতা, ফারুক, আলীরাজ, ববিতা, খান আসিফ আগুন প্রমুখ। এই চলচ্চিত্রের জন্য খান আতাউর রহমান ২২তম জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে শ্রেষ্ঠ সঙ্গীত পরিচালক ও শ্রেষ্ঠ গীতিকার হিসেবে পুরস্কার লাভ করেন।

হাঙ্গর নদীর গ্রেনেড: হাঙর নদী গ্রেনেড বাংলাদেশের প্রখ্যাত সাহিত্যিক সেলিনা হোসেন রচিত একটি বাংলা ভাষার উপন্যাস। উপন্যাসটি ১৯৭৬ সালে প্রকাশিত হয়। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময়কালের যশোরের কালীগঞ্জ গ্রামের এক মায়ের সত্য ঘটনা অবলম্বনে সেলিনা হোসেন এই উপন্যাসটি রচনা করেন। ১৯৭২ সালে গল্পাকারে ঘটনাটি লিখেন এবং সমকালীন টেরেডাকটিল নামে তরুণদের একটি পত্রিকায় গল্পটি ছাপা হয়েছিল। পরে তিনি ১৯৭৪ সালে গল্পটিকে উপন্যাস আকারে লিখেন এবং ১৯৭৬ সালে প্রকাশিত হয়। পরবর্তীকালে এ উপন্যাস অবলম্বনে চলচ্চিত্র পরিচালক চাষী নজরুল ইসলাম হাঙর নদী গ্রেনেড নামে একটি চলচ্চিত্রও নির্মাণ করেন। চলচ্চিত্রটি ১৯৯৭ সালে মুক্তি পায়। ছায়াছবিতে বুড়ি মায়ের চরিত্রে অভিনয় করেন সুচরিতা। এ ছাড়াও বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেছেন সোহেল রানা, অরুনা বিশ্বাস, অন্তরা, ইমরান, দোদুল ও আশিক।

আমার বন্ধু রাশেদ: ২০১১ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত একটি বাংলাদেশী যুদ্ধভিত্তিক চলচ্চিত্র। মুহম্মদ জাফর ইকবাল রচিত একই নামের শিশুতোষ উপন্যাস অবলম্বনে বাংলাদেশ সরকারের অনুদানে চলচ্চিত্রটি পরিচালনা করেছেন মোরশেদুল ইসলাম। চলচ্চিত্রটি প্রযোজনা করেছে মমন চলচ্চিত্র ও ইমপ্রেস টেলিফিল্ম। এই চলচ্চিত্রে প্রধান চরিত্রে অভিনয় করেছেন চৌধুরী জাওয়াতা আফনান, অন্যান্য চরিত্রে ছিলেন রাইসুল ইসলাম আসাদ, পীযুষ বন্দ্যোপাধ্যায়, ইনামুল হক, হুমায়রা হিমু, ওয়াহিদা মল্লিক জলি, আরমান পারভেজ মুরাদ, এ ছাড়াও শিশুশিল্পী হিসেবে অভিনয় করেছেন রায়ান ইবতেশাম চৌধুরী, কাজী রায়হান রাব্বি, লিখন রাহি, ফাইয়াজ বিন জিয়া, রাফায়েত জিন্নাত কাওসার আবেদীন। ১৯৭১ সালে মফস্বল শহরের কয়েকজন কিশোর কীভাবে মুক্তিযুদ্ধের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ে, তারই কিছু চিত্র ফুঁটে উঠেছে গল্পে। এর আগে মোরশেদুল ইসলাম কিশোর চলচ্চিত্র দীপু নাম্বার টু (১৯৯৬) এবং খেলাঘর (২০০৬) নামে মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক চলচ্চিত্র নির্মাণ করেন।

গেরিলা: সব্যসাচী লেখক সৈয়দ শামসুল হকের মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক উপন্যাস ‘নিষিদ্ধ লোবান’। এই উপন্যাসের প্রেক্ষাপটে ২০১১ সালে নাসির উদ্দীন ইউসুফ নির্মাণ করেন ‘গেরিলা’ চলচ্চিত্রটি। একজন বলিষ্ঠ নারী চরিত্রকে কেন্দ্র করে এগিয়ে যায় গল্পের চিত্রপট। বিলকিস নামের মেয়েটির স্বামী সাংবাদিক হাসান ২৫ মার্চ রাতে নিখোঁজ হয়। সেই রাতেই শুরু হয়ে যায় পাকিস্তানি বাহিনীর ধ্বংসযজ্ঞ। যুদ্ধের একপর্যায়ে নিখোঁজ স্বামীকে খোঁজার পাশাপাশি মুক্তিযুদ্ধে জড়িয়ে যায় বিলকিস। ছবিটির বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেন জয়া আহসান, ফেরদৌস, শতাব্দী ওয়াদুদ। ‘গেরিলা’ কয়েকটি আন্তর্জাতিক পুরস্কার এবং ২০১১ সালের শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র ও শ্রেষ্ঠ পরিচালকসহ বেশ কয়েকটি শাখায় জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করে। 

মেহেরজান: এটি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক একটি চলচ্চিত্র। রুবাইয়াত হোসেন পরিচালিত এই ছবিটি ২০১১ সালের ২১শে জানুয়ারি দেশের ৬টি প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পায়। মুক্তির পর থেকে ছবিটি ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনার ঝড় তুলে। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ আর ভালবাসার চিরন্তন গল্প নিয়ে ছবিটি নির্মাণ করছেন পরিচালক। এরা মোশন পিকচার্স এর ব্যানারে নির্মিত ছবিটির বাংলাদেশের পরিবেশক আশীর্বাদ চলচ্চিত্র । ছবিতে নাম ভূমিকায় অভিনয় করেছেন বলিউডের বিখ্যাত অভিনেত্রী জয়া বচ্চন। অন্যতম একটি গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে অভিনয় করেছেন আন্তর্জাতিক খ্যাতি সম্পন্ন ভারতীয় অভিনেতা ভিক্টর ব্যানার্জী। এ ছাড়াও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে অভিনয় করেন ওমর রহিম (পাকিস্তান), শায়না আমিন, হুমায়ুন ফরীদি, খাযরুল আলম সবুজ, আজাদ আবুল কালাম, রীতু আব্দুস সাত্তার, রুবাইয়াত হোসেন ও নাসিমা সেলিম।

জীবনঢুলী: এই ছবিটি হল বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের পটভূমিতে নির্মিত একটি চলচ্চিত্র। ১৯৭১ সালে এদেশের সাধারণ মানুষদের ওপর পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীরা যে বর্বরোচিত হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছে তারই এক চলমান দলিল এ চলচ্চিত্র। এই চলচ্চিত্রটি সরকারি অনুদানে নির্মিত হয়েছে। ১৪ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ সালে ছবিটির প্রিমিয়ার শো হয়। তানভীর মোকাম্মেল পরিচালিত এই ছবিতে নিম্নবর্ণের দরিদ্র ঢাকি "জীবনকৃষ্ণ দাস" এর জীবন এবং তার এলাকায় ঘটে যাওয়া নারকীয় হত্যাযজ্ঞ আবির্ভূত হয়েছে। ছবিটির চিত্রগ্রহণ করেছেন মাহফুজুর রহমান খান, শিল্প নির্দেশনা ও প্রধান সহকারী পরিচালক -উত্তম গুহ,সঙ্গীত পরিচালনা- সৈয়দ সাবাব আলী আরজু, সম্পাদনা -মহাদেব শী এবং নিবেদক হচ্ছেন- সাইফুর রহমান। এতে অভিনয় করছেন শতাব্দী ওয়াদুদ, রামেন্দু মজুমদার, তবিবুল ইসলাম বাবু, ওয়াহিদা মলি্লক জলি, চিত্রলেখা গুহ, জ্যোতিকা জ্যোতি, প্রাণ রায়, ইকবাল হোসেন, পরেশ আচার্য, উত্তম গুহ, জামিলুর রহমান শাখা, রিমু খন্দকারসহ মঞ্চের বেশ কয়েকজন অভিনয়শিল্পী।

৭১ এর মা জননী: ৭১ এর মা জননী ২০১৪ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত বাংলাদেশী বাংলা ভাষার চলচ্চিত্র। এটি পরিচালনা করেছেন শাহ আলম কিরণ। বাংলাদেশী লেখক আনিসুল হক রচিত জননী সাহসিনী ৭১ অবলম্বনে নির্মিত হয় ছবিটি। সরকারি অনুদানপ্রাপ্ত এই ছায়াছবিটি পরিবেশনায় ছিল ইমপ্রেস টেলিফিল্ম। মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণকারী বীরাঙ্গনাদের জীবনচিত্র তুলে ধরা হয়েছে এতে। বীরাঙ্গনা জননীর ভূমিকায় অভিনয় করেছেন নিপুণ আক্তার। তার স্বামীর ভূমিকায় অভিনয় করেছেন কণ্ঠশিল্পী খান আসিফ আগুন। এ ছাড়া অন্যান্য ভূমিকায় অভিনয় করেছেন চিত্রলেখা গুহ, ম ম মোর্শেদ, শাকিল আহমেদ, মিশু চৌধুরী, গুলশান আরা প্রমুখ।

যুদ্ধশিশু: প্রখ্যাত পরিচালক মৃত্যুঞ্জয় দেবব্রত পরিচালিত ২০১৩ সালের মুক্তিপ্রাপ্ত একটি হিন্দি চলচ্চিত্র। ছবিটি ২৭ ডিসেম্বর মুক্তি পায়। বাংলাদেশেও ছবিটিতে অভিনয় করেছেন রিদ্ধি সেন, রুচা ইনামদার এবং ভিক্টর বন্দ্যোপাধ্যায়। এই চলচ্চিত্রে ১৯৭১ সালের বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। চলচ্চিত্রটিতে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানের সৈনিকদের বাংলাদেশি মহিলাদের ধর্ষণ ও তার প্রতিবাদের গল্প তুলে ধরা হয়েছে। এই ছবিতে মুখ্য ভূমিকায় অভিনয় করেছেন রাইমা সেন। আর সাংবাদিকের চরিত্রে অভিনয় করেছেন ইন্দ্রনীল সেনগুপ্ত।

অনিল বাগচীর একদিন: অনিল বাগচীর একদিন ২০১৫ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত একটি বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধভিত্তিক চলচ্চিত্র। হুমায়ূন আহমেদ রচিত একই নামের উপন্যাস অবলম্বনে চলচ্চিত্রটি পরিচালনা করেছেন মোরশেদুল ইসলাম। চলচ্চিত্রটি প্রযোজনা করেছে বেঙ্গল ক্রিয়েশনস। এ ছবিতে অনিল বাগচীর চরিত্রে অভিনয় করেছেন নবাগত অভিনেতা আরেফ সৈয়দ। এ ছাড়া অন্যান্য চরিত্রে রয়েছেন গাজী রাকায়েত, তৌফিক ইমন, জ্যোতিকা জ্যোতি, ফারহানা মিঠু, এবং মিশা সওদাগর।

মুক্তিযুদ্ধ আমাদের অহংকার। আর সেই অহংকারের উপর আমাদের সিনেমার সংখ্যা যে অসংখ্য, তা কিন্তু বলা যাবে না। এতো স্বল্প পরিসরে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি সিনেমার নামই নেয়া গেল কেবল। এ ছাড়াও তৌকির আহমেদের ‘জয়যাত্রা’, তানভীর মোকাম্মেলের ‘আমার বন্ধু রাশেদ’, চাষী নজরুল ইসলামের ‘সংগ্রাম’, মমতাজ আলীর ‘রক্তাক্ত বাংলা’, আলমগীর কুমকুমের ‘আমার জন্মভূমি’, হুমায়ূন আহমেদের ‘শ্যামলছায়া’, হারুন অর রশীদের ‘মেঘের অনেক রং’ বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।এ ছাড়াও স্বাধীনতা পরবর্তী সময় থেকে আজ অবধি আরো অনেক চলচ্চিত্রে উঠে এসেছে এ দেশের মুক্তির ইতিহাস। আমাদের এই নতুন প্রজন্মকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় গড়ে ওঠার পথে এই সব চলচ্চিত্রের আবেদন যুগ যুগান্তর নিরন্তন হয়ে থাকবে।

দৈনিক চাঁদপুর
দৈনিক চাঁদপুর