চাঁদপুরে নোংরা পরিবেশে ভেজাল সামগ্রী দিয়ে তৈরি হচ্ছে বেকারি পণ্য

মতলব উওরে আখি বেকারীর কর্মচারি জাকির থেকে জানা যায়, আমরা এখানে কাজ করি। আমরা যতটা সম্ভব পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন পরিবেশে কাজ করার চেষ্টা করছি। কারখানাগুলোতে নেই মান নির্ণয়ের প্রক্রিয়া বা কাগজপত্র। শরীরের ঘামে মাখো মাখো অবস্থা। আবার খাবারের উপরে পড়নের পোষাক ঝুলানো বিভিন্ন ব্রেড কারখানায়। সাংবাদিকের ক্যামেরা দেখে শুরু হয় নোংরা পরিবেশ ঠিক করার তোড়জোড়।

বেকারিতে কর্মরত শ্রমিকদেরকে বেকারীর অভ্যন্তরীন পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা নিয়ে জিজ্ঞেস করা হলে তারা বলেন, এখানে প্রতিদিন পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা করা হয়। আবার এ রকম অবস্থা হয়। তারপর পরিষ্কার করি। ক্যামেরা দেখে তাদের তোড়জোড় আরও বেড়ে যায়। পাশের আরেক কারখানায় পোড়া, কালচে তৈল ও ময়লাযুক্ত চিনির সিরায় তৈরি হচ্ছে সিঙ্গারাসহ নানা মুখোরোচক খাবার।

নোংরা পরিবেশে ভেজাল ও নিম্ন উপকরণ দিয়ে অবাধে তৈরি করা হচ্ছে বেকারি সামগ্রী। রয়েছে ক্ষতিকারক রাসায়নিক পদার্থ, কেমিক্যাল এবং একাধিক ড্রামে পাম ওয়েল। আশপাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে নানা ধরনের তৈরি পণ্য। শ্রমিকরা খালি পায়ে এসব পণ্যরে পাশ দিয়ে হাঁটাহাঁটি করছে। আটা ময়দা প্রক্রিয়াজাত করানো কড়াইগুলোও রয়েছে অপরিষ্কার ও নোংরা। ডালডা দিয়ে তৈরী করা ক্রিম রাখা পাত্রগুলোতে ঝাঁকে ঝাঁকে মাছি ভন ভন করছে। উৎপাদন ও মেয়াদোর্ত্তীর্ণ তারিখ ছাড়াই জেলার নামি দামি বাহারি মোড়কে বনরুটি, পাউরুটি, কেক, বিস্কুট, পুডিংসহ বিভিন্ন ধরনের বেকারি সামগ্রী উৎপাদন ও বাজারজাত করা হচ্ছে।

বিএসটিআিই ও ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে মাঝে মধ্যেই এসব কারখানায় অভিযান চালিয়ে জেল-জরিমানা করা হয়। এখন তারা আরো বেপোরোয়া গতিতে চালাচ্ছে তাদের পণ্য উৎপাদন। তাছাড়া এসব বেকারি মালিকরা বিকল্প বেকারি মোড়কে ভেজাল খাদ্যসামগ্রী উৎপাদন করে প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে বিভিন্ন চায়ের দোকানে সরবরাহ করছে বলে অভিযোগ রয়েছে। একই অবস্থা, চাঁদপুর জেলায় গড়ে ওঠা কারখানাগুলোতেও। পোড়া তৈলে বারবার ভাজার কথা স্বীকারও করলেন কারখানা সংশ্লিষ্টরা।

বেকারিতে কর্মরত শ্রমিক আলমগীর হোসেন বলেন, প্রতিদিন এখানে নতুন করে তৈল দেয়া হয়। পুরানো তৈল ব্যবহার করা হয় না। চিকিৎসকরা জানালেন, নিম্নমানের তৈরি খাবার মানুষের জীবনকেই হুমকিতে ফেলে দিতে পারে।

মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডাক্তার জানান, ভেজাল খাবার আমাদের দেহে ক্যান্সারের মতো ভয়াবহ রোগ সৃষ্টি করতে পারে। এছাড়াও আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম মারাত্মক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে। তাই স্বাস্থ্যঝুঁকি এড়িয়ে সুস্থ জীবন-যাপনের জন্য এসব খাবার যতোটা সম্ভব এড়ানোর পরামর্শ দিলেন তারা। জেলা সদরের বাহিরে বিভিন্ন উপজেলার অলিতে-গলিতে গড়ে উঠেছে বিভিন্ন নামে বেকারি যাবতীয় এসব কারখানার। অথচ বাইরে থেকে বোঝার উপায় নেই। নোংরা পরিবেশে এমন খাবার তৈরি দেখে যে কেউ দৃষ্টি পিরিয়ে নেয়। ময়লা- ধুলাবালিতে তৈরি এসব খাবার বিক্রি হয়, সারা চাঁদপুরে নোংরা ডালডা দিয়ে তৈরি হচ্ছে এসব খাবার।