কর্মসংস্থান বৃদ্ধি ও গ্রামের উন্নয়নে গুরুত্ব

উন্নয়ন ও প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা তৈরির কাজ শুরু করেছে সরকার। গ্রামে শহরের সব সুবিধা পৌঁছে দেয়া, দেড় কোটি নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও আয়বৈষম্য কমানোসহ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্বাচনী প্রতিশ্রুতিগুলো বাস্তবায়নের রূপরেখা থাকবে নতুন পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায়। এ লক্ষ্যে ইতিমধ্যে অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা তৈরির কাজ শুরু করেছে পরিকল্পনা কমিশন।

২০২০ সালের জুলাই থেকে ২০২৫ সালের জুন পর্যন্ত পাঁচ বছর মেয়াদে পরিকল্পনাটি বাস্তবায়ন করা হবে। পরিকল্পনাটি তৈরির দায়িত্ব পালন করছেন সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের (জিইডি) সদস্য (সিনিয়র সচিব) ড. শামসুল আলম।

অন্যদিকে শহরের সুযোগ-সুবিধা গ্রামে পৌঁছানোর ক্ষেত্রে উন্নয়ন প্রকল্প প্রক্রিয়াকরণে বিশেষ নজর দিতে পরিকল্পনা কমিশনকে নির্দেশনা দিয়েছে পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান। সেই সঙ্গে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি মানসম্মতভাবে সর্বোচ্চ বাস্তবায়নে প্রতি মাসেই সেক্টরভিত্তিক বৈঠক করবেন তিনি।

ড. শামসুল আলম রোববার বলেন, প্রধানমন্ত্রীর দেয়া প্রতিশ্রুতি এবং নির্বাচনী ইশতেহারের সফল রূপায়ণ হবে অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায়। সমাপ্ত হওয়া ষষ্ঠ, সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা এবং চলমান সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার ধারাবাহিকতা রক্ষা ও প্রবৃদ্ধির উচ্চহার ধরে রাখার পরিকল্পনা থাকবে এতে।

এছাড়া টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) এবং সরকারের ভিশন-২০৪১ বাস্তবায়নের পরিকল্পনাও থাকবে। নতুন পরিকল্পনাটি হবে আরও বেশি সংহত এবং উচ্চ প্রবৃদ্ধি সহায়ক।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে সুশাসনের জন্য নাগরিক-সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ সরকার দিনবদলের সনদ দিয়ে নির্বাচনে জয়লাভ করার পর আমি ব্যক্তিগতভাবে সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ের নীতিনির্ধারকদের কাছে গিয়েছি।

বলেছি, নির্বাচনী ইশতেহার বাস্তবায়নে একটি কর্মপরিকল্পনা তৈরি করা উচিত। কিন্তু তা করা হয়নি। ফলে ওই সময়ের ইশতেহারের অধিকাংশই বাস্তবায়ন হয়নি। এবারও ইশতেহার বাস্তবায়নে কর্মপরিকল্পনা তৈরির তাগিদ দেয়া হয়েছে। সেক্ষেত্রে অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় যদি বিষয়গুলো উঠে আসে তাহলে আশা করছি ভালো কিছু হবে।

জিইডি সূত্র জানায়, অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার অংশ হিসেবে সামষ্টিক অর্থনীতির ফ্রেমওয়ার্ক তৈরির কাজ শুরু হয়েছে। এক্ষেত্রে কী কী বিষয় নিয়ে গবেষণাপত্র হবে তার কাজ চলছে। সেই সঙ্গে একটি ধারণাপত্র তৈরির প্রক্রিয়াও শুরু হয়েছে। এটি মার্চের মধ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে অবহিত করে মতামত ও পরামর্শ নেয়ার পরিকল্পনা রয়েছে।

তারপর ওই ধারণাপত্রের আলোকে পূর্ণাঙ্গ পরিকল্পনার খসড়া তৈরি করা হবে।

আগামী বছরের ৩১ মে’র মধ্যেই অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা চূড়ান্ত করার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। পরিকল্পনায় বিশেষ গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা অনুযায়ী গ্রামে শহরের সব নাগরিক সুবিধা পৌঁছানোকে। পাশ্চাত্যের দেশগুলোর মতো গ্রামগুলো সাজানো হবে।

এক্ষেত্রে মানুষ একটি জায়গায় বসবাস করবে। যে যেটি করতে চায় করতে পারবে। কেউ কৃষিকাজ করবে, কেউ মৎস্য শিকার করবে, ব্যবসা-বাণিজ্য করতে চাইলে করবে। তাছাড়া শিক্ষার সঙ্গে যারা যুক্ত তারা গ্রামে থেকেই সেই কাজ করবে। কারও পেশার ক্ষেত্রে কোনো বাধা আসবে না। ঘুচে যাবে গ্রাম ও শহরের সুবিধার পার্থক্য। এসব কর্মকাণ্ড কীভাবে করা হবে, তার বিস্তারিত থাকবে অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায়।

এ ছাড়া দেড় কোটি নতুন কর্মসংস্থান কীভাবে সৃষ্টি হবে, তার কৌশল থাকবে পরিকল্পনায়। সেই সঙ্গে আয়বৈষম্য কমিয়ে আনা, আঞ্চলিক বৈষম্য কমানো, উৎপাদনমুখী শিল্পোন্নত দেশ হিসেবে বাংলাদেশকে গড়ে তোলা এবং সামষ্টিক অর্থনৈতিক কাঠামো অর্জনের প্রক্ষেপণ থাকবে পরিকল্পনায়। শুধু পরিকল্পনাই নয়, তার বাস্তবায়ন অগ্রগতি পর্যালোচনার জন্য অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় মধ্যবর্তী মূল্যায়নেরও ব্যবস্থা রাখা হবে।

সংশ্লিষ্টদের মতে, ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে টানা তৃতীয়বার সরকার গঠন করেছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ। এই নির্বাচনে উন্নয়নেই সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেয়া হয়েছে, যার ওপর আস্থা রেখেছে জনগণ। সেই আস্থার প্রতিদান দিতে শুরু থেকেই প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের পথে হাঁটছে সরকার।

পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, ২২ জানুয়ারি পরিকল্পনা কমিশনের বিভিন্ন বিভাগের সদস্য এবং পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বিভাগগুলোর সচিবদের নিয়ে বৈঠক করেছেন পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান। রাজধানীর আগারগাঁওয়ে তার অফিসে অনুষ্ঠিত বৈঠকে তিনি উচ্চ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য অর্জনে গতি বৃদ্ধির তাগিদ দিয়েছেন। অর্থাৎ চলমান উন্নয়ন কার্যক্রম মানসম্মতভাবে এবং নির্ধারিত সময়ে বাস্তবায়নের নির্দেশনা দিয়েছেন।

এক্ষেত্রে প্রতি মাসে পরিকল্পনা কমিশনের সেক্টরভিত্তিক বৈঠক করবেন তিনি। এছাড়া গ্রামে শহরের সব সুবিধা পৌঁছানের ক্ষেত্রে যেসব প্রকল্প বিশেষ ভূমিকা রাখবে সেগুলোর প্রতি গুরুত্ব দেয়ার নির্দেশনাও দিয়েছেন তিনি।

এ প্রসঙ্গে পরিকল্পনা বিভাগের সিনিয়র সচিব জিয়াউল ইসলাম বলেন, শহরের সুবিধা গ্রামে কীভাবে নিশ্চিত করা যাবে, সে বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে বৈঠকে। আগামী বছরগুলোয় এমন কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা হবে যাতে মানুষকে আর শহরমুখী হতে না হয়।

ফলে শহরগুলোর ওপর চাপ কমে যাবে। হাতের কাছেই সব সুযোগ-সুবিধা পাবে গ্রামের মানুষ। উন্নয়ন প্রকল্পের দ্রুত ও মানসম্মত বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে প্রতি মাসেই বৈঠক করবেন পরিকল্পনামন্ত্রী। এসব বৈঠকে প্রকল্প বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে কোনো সমস্যা থাকলে সেগুলো সমাধানে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেয়া হবে।