মতলবে ৮ম শ্রেণির ছাত্রীর করুন মৃত্যু

মতলব দক্ষিণ উপজেলার উপাদী উত্তর ইউনিয়নের বহরী এলাকায় সহপাঠীদের ইভটিজিংয়ের যন্ত্রণা থেকে বাঁচতে এবং অপমান সহ্য করতে না পেরে এ পৃথিবী থেকেই বিদায় নিলো রোকসানা। আত্মহননের পথ বেছে নিয়ে এ সমাজকেই যেনো সে মুক্তি দিয়ে গেলো। রোকসানা আক্তার দৃষ্টি (১৪) নামে ৮ম শ্রেণিতে পড়ুয়া ওই কিশোরী তারই সহপাঠী দুই লম্পটের উপর্যুপরি উত্ত্যক্তের হাত থেকে আর নিজেকে কোনোভাবেই রক্ষা করতে না পেরে আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছে। ২৫ সেপ্টেম্বর বুধবার দুপুরে ওই ছাত্রী স্কুল থেকে বাড়ি গিয়ে তার নিজ বসতঘরে গলায় ওড়না পেঁচিয়ে আত্মহত্যা করে। এ ঘটনায় পুলিশ সন্ধ্যায় আকাশ ও সাবি্বর নামে রোকসানারই সহপাঠী দুই ইভটিজারকে আটক করেছে। গতকাল তাদেরকে জেলহাজতে পাঠানো হয়।

সরজমিনে গিয়ে জানা যায়, উপজেলার উপাদী উত্তর ইউনিয়নের বহরী গ্রামের আব্দুর রশিদ বেপারীর মেয়ে রোকসানা আক্তার দৃষ্টি স্থানীয় বহরী উচ্চ বিদ্যালয়ের ৮ম শ্রেণিতে পড়তো। ঘটনার অনেক দিন আগে থেকে তার দুই সহপাঠী আকাশ ও সাবি্বর বিদ্যালয়ে আসা-যাওয়ার পথে এবং শ্রেণি কক্ষে তাকে উত্ত্যক্ত করতো। এ নিয়ে বিদ্যালয়ে তাদের উভয়ের সাথে রোকসানার বাগ্বিত-া হলে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মাহবুবুর রহমান তাদের ডেকে এনে শাসিয়ে দেন।

রোকসানার মা রোকেয়া বেগম বলেন, মেয়েকে উত্ত্যক্ত করার বিষয়ে আমি ঘটনার দিন বুধবার সকালে আকাশ ও সাবি্বরের মা-বাবার কাছে নালিশ নিয়ে গেলে তারা কোনো পাত্তা দেননি। বরং তারা তাদের ছেলেদের পক্ষ নিয়ে উল্টো আমাকে নানান কটু কথা শুনিয়ে দেয়।

এরপর এদিনই (বুধবার) রোকসানা বিদ্যালয়ে গেলে সেখানেও তাকে আকাশ ও সাবি্বর উত্ত্যক্ত করে এবং তাকে ফাঁসি দিয়ে মরতে বলে। এতে রোকসানা আক্তার ক্ষোভ নিয়ে বাড়িতে এসে পরিবারের সদস্যদের অগোচরে নিজ ঘরে গলায় ওড়না পেঁচিয়ে আত্মহত্যা করে। ঘটনার পর রোকসানার মা ঘরে ঢুকে মেয়েকে ঝুলন্ত অবস্থায় দেখে ডাক চিৎকার দেন। তখন আশপাশের লোকজন এগিয়ে এসে তাকে উদ্ধার করে মতলব দক্ষিণ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেঙ্ েনিয়ে গেলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

এদিকে ৮ম শ্রেণির ছাত্রীর আত্মহত্যার ঘটনায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ শাহিদুল ইসলাম, থানার অফিসার ইনচার্জ স্বপন কুমার আইচ ও মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা আমেনা বেগম ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে শোকাহত পরিবারের সদস্যদের সান্ত্বনা দেন এবং সুষ্ঠু বিচারের আশ্বাস দেন।

মতলব দক্ষিণ থানার অফিসার ইনচার্জ বলেন, আত্মহত্যার ঘটনায় রোকসানার মা আকাশ ও সাবি্বরসহ আরো কয়েকজনের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ দেন। অভিযোগের ভিত্তিতে প্রথমে জিজ্ঞাসাবাদের জন্যে আকাশ ও সাবি্বরকে আটক করা হয়। পরে গতকাল তাদেরকে আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে পাঠানো হয়। রোকসানার লাশ ময়না তদন্তের পর পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। গতকাল তার নামাজে জানাজা শেষে পারিবারিক গোরস্থানে দাফন করা হয়।